সবার জন্য শিক্ষার পথে অনেক বাধা
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৯অন্যদিকে, প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির হার এখন শতভাগ হলেও ৪৬ ভাগ ছেলেমেয়েই প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয়৷ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী এর জন্য প্রধানত দারিদ্র্যকেই দায়ী করেছেন৷ যোগ্য শিক্ষকের অভাব, শিক্ষা উপকরণ ও স্কুলঘর না থাকাকেও দায়ী করেন তিনি৷ তিনি জানান, চরাঞ্চল ও পাহাড়ি অঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা খুবই হতাশা ব্যাঞ্জক৷
ঢাকার অদূরে সাভারে একটি প্রাইমারি স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে রাশেদা কে চৌধুরীর কথার সত্যতা পাওয়া যায়৷ স্কুল শিক্ষিকা হালিমা বেগম জানান, অনেকে ভর্তি হলেও দারিদ্র্যের কারণে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না৷ বিনামূল্যে বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা থাকলেও দারিদ্র্য কেন বাধা হচ্ছে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বাবা-মারা মনে করেন, স্কুলে না পাঠিয়ে কাজে পাঠালে তারা আয় করতে পারবে৷
২০১৫ সালের মধ্যে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষার ভিতকে শক্তিশালী করতে হবে৷ আর এজন্য প্রাথমিক শিক্ষার প্রতি আরও নজর দেয়া প্রয়োজন৷ অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান বলেন, শিক্ষার হার ৬৫ ভাগ বলে দাবি করা হয়৷ কিন্তু সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এই গাণিতিক হিসাব যথেষ্ট নয়৷ শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে৷ তিনি বলেন, গুণগত মানের দিক থেকে প্রাথমিক ও উচ্চ শিক্ষা অনেক পিছিয়ে আছে৷ বাংলাদেশে ২২ হাজারের বেশী উচ্চ বিদ্যালয়, সাড়ে ৩ হাজার কলেজ ও ৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷ এছাড়াও রয়েছে সরকারী ও বেসরকারী মাদ্রাসা৷ যার সংখ্যা ১১ হাজার৷ এর বাইরে রয়েছে অনিবন্ধিত কওমী মাদ্রাসা৷ এই প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বলেন, ১১ ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা জিইয়ে রেখে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়৷ এখানে শিক্ষা ব্যবস্থায় শহর-গ্রামের যেমন পার্থক্য রয়েছে৷ তেমনি পার্থক্য রয়ে ধনী আর গরীবের মধ্যে৷ আর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের পার্থক্য তো রয়েছেই৷ তার মতে, সবার জন্য শিক্ষা বলতে আমরা কি বুঝি তা আগে নির্ধারণ করা উচিত৷
তবে রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, হতাশার মধ্যেও আশার আলো আছে৷ কারণ বাংলাদেশে শিক্ষার চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে৷ শিক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলো দূর করতে পারলে হয়তো সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে৷