মঙ্গলবার কলকাতার মাক্স ম্যুলার ভবনে শ্রোতাদের মুখোমুখি হলেন ডয়চে ভেলের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান গ্রেহেম লুকাস৷
ডয়চে ভেলের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান গ্রেহেম লুকাস৷ (ফাইল ফটো)
কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষী শ্রোতাবন্ধুদের সঙ্গে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের যোগাযোগ প্রতিদিনই হয়, নিয়মিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে৷ কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতাদের একটা মৃদু অনুযোগ দীর্ঘদিনই ছিল যে সেখানে ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের শ্রোতা সমাবেশ করা হয় না৷ কলকাতা বইমেলা বা অন্যান্য উপলক্ষে বাংলা বিভাগের বিভিন্ন কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ কখনো সখনো তৈরি হয় বটে, কিন্তু শ্রোতা সমাবেশের খোলা ফোরামে সরাসরি মত বিনিময় করার যে প্রাণবন্ত অভিজ্ঞতা, তার থেকে তারা বঞ্চিতই থাকেন৷
শ্রোতাদের দাবি, এমন সম্মেলন যেন বাৎসরিক উৎসবে পরিণত হয়৷
অবশেষে পশ্চিমবঙ্গের শ্রোতাদের সেই আক্ষেপ মিটল৷ মঙ্গলবার কলকাতায় মাক্স ম্যুলার ভবনের প্রেক্ষাগৃহে ডয়চে ভেলের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান গ্রেহেম লুকাস, এবং বাংলা বিভাগের অন্যতম সম্পাদক দেবারতি গুহ মুখোমুখি হলেন শতাধিক শ্রোতার৷ শ্রোতাদের অভাব, অভিযোগ, পরামর্শ, অনুরোধ তাঁরা সরাসরি শুনলেন, শ্রোতাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিলেন এবং ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের বর্তমান অনুষ্ঠানের ধারা, গতি প্রকৃতি এবং রীতিনীতি সম্পর্কে শ্রোতাদের মতামত যাচাই করলেন৷
এই শ্রোতা সম্মেলনের শরিক হতে পেরে অত্যন্ত খুশি হাওড়ার রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা ভীষণ খুশি হয়েছি আজকে যে ডয়চে ভেলের তরফ থেকে দুজন প্রধান ব্যক্তিকে আমরা এখানে পেলাম৷ এমন সুযোগ তো বড় আসে না৷ আমাদের আশা রইল, আগামীতেও আমাদের মধ্যে যোগাযোগ যেন আরও সুনিবিড় হয়৷''
রাজীবের মতই ডয়চে ভেলের আরেক পুরনো, মুর্শিদাবাদের শ্রোতা আরতি মজুমদার মনে করিয়ে দিলেন, শ্রোতা সম্মেলনে উপস্থিতির হার একটু কম মনে হলেও, বাংলা অনুষ্ঠানের শ্রোতার সংখ্যা কিন্তু আসলে অনেক বেশি৷ তাঁর মতে, ‘‘শ্রোতাসংখ্যাটা ঠিক আশানুরূপ হয়নি৷ তবে এত দূরের ব্যাপার তো৷ সেটা যাতায়াতের অসুবিধা বা অনেক কারণে হতে পারে৷ তবে ডয়চে ভেলের শ্রোতাসংখ্যা প্রচুর৷ এটা আমরা জানি, এটা আমরা প্রতিদিনই শুনছি৷ প্রত্যেকের সঙ্গেই আমাদের ভাব বিনিময় বা চিঠিপত্রের আদানপ্রদান আছে৷''
গোল্ডেন ডি এক্স ক্লাবের ডাঃ সিদ্ধার্থ সরকার ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করলেন, এমন শ্রোতা সম্মেলন যেন বাৎসরিক উৎসবে পরিণত হয়৷ তিনি বললেন, ‘‘আমার ভীষণ ভাল লাগছে৷ ভাল লাগছে আরও এই জন্য যে শেষপর্যন্ত আপনারা শ্রোতাদের দাবি মেনে আপনারা পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন৷ আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি৷ অনুষ্ঠানের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি৷ আগামীতে আপনারা আসবেন, এটা বাৎসরিক উৎসবে পরিণত হবে, এই প্রত্যাশা নিয়ে শেষ করছি৷''
ডয়চে ভেলের শ্রোতারা আসলে এক বৃহৎ পরিবারের সদস্যের মত৷ ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রয়াত সহকর্মী শুভ্রা দাশগুপ্তার কথা স্মরণ করে সেই কথাটা আরেকবার প্রমাণ করলেন বেহালার শ্রোতা প্রিয়নজিৎ কুমার ঘোষাল৷ ‘‘১৯৯১ সালের কথা এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে৷ শুভ্রাদিরা এসেছিলেন৷ আক্ষরিক অর্থে শ্রোতা সম্মেলন ছিল না, কিন্তু তাঁর আন্তরিক উদ্যোগে শ্রোতাদের একটা গেট টুগেদার হয়েছিল৷ শুভ্রাদি আজ নেই, কিন্তু তাঁর স্মৃতি আজও আমরা বহন করে চলেছি৷''
ডয়চে ভেলের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান গ্রেহেম লুকাসও অত্যন্ত সন্তুষ্ট যে শ্রোতাদের সঙ্গে তাঁদের এই ভাব বিনিময়ের সুবাদে, অনুষ্ঠানের সমালোচনার পাশাপাশি প্রচুর প্রশংসাও তাঁরা পেলেন৷ দু বছর আগে বাংলা অনুষ্ঠানকে যেভাবে ঢেলে সাজানো হয়েছিল, তা শ্রোতাদের পছন্দ হয়েছে এবং ডয়চে ভেলে বাংলা ওয়েবসাইটেরও জনপ্রিয়তা বেড়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অনুষ্ঠান সম্পর্কে খুবই গভীরভাবে আলোচনা হয়েছে৷ বেশ কিছু সমালোচনা শুনলাম, যা আমাদের ভাবাবে৷ কিন্তু প্রশংসাও কম ছিল না৷ গত কয়েক বছরে যে সব সংস্কার হয়েছে, সেবিষয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়ে আমরা খুশি৷ আমাদের ওয়েবসাইটের ভক্তসংখ্যাও বাড়ছে দেখে ভাল লাগলো৷''
শ্রোতা সম্মেলনের সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন দেবারতি গুহ৷ তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থাপনার প্রশংসাতেও এদিন মুখর ছিলেন শ্রোতারা৷