1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানিতে আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা

১৭ জানুয়ারি ২০১২

ভারতের সনাতন আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে জার্মানিতেও৷ অনেকে আগ্রহী হয়ে, কেউ কেউ আবার অন্যান্য চিকিত্সায় উপকার না পেয়ে দ্বারস্থ হচ্ছেন আয়ুর্বেদীয় চিকিত্সার৷

https://p.dw.com/p/13kea
আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা নিচ্ছেন কয়েকজনছবি: Maharishi Privat Klinik Bad Ems

নর্ডহাইম শহরের লুডোভিক মার্টিনের মেজাজটা এখন ফুরফুরে৷ আয়ুর্বেদীয় এক ক্লিনিকে চিকিত্সা নিচ্ছেন ডাচ বংশোদ্ভূত মার্টিন৷ এবার নিয়ে সাত বার হল৷ অবশ্য এজন্য তাঁর বোনের ধন্যবাদ প্রাপ্য৷ ছুটি কাটানোর জন্য একটি ফিটনেস হোটেল খুঁজছিলেন মার্টিন৷ কিন্তু বোন হোটেলের বদলে আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকে যেতে পরামর্শ দেন ভাইকে৷ বাড এমস শহরের মহাঋষি আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকে একটি সিটও বুক করে ফেলেন ভাইয়ের জন্য৷ সেই থেকে মার্টিন প্রতিবছরই ছুটির সময়ে ছুটে যান এই ক্লিনিকটিতে৷ সারা বছরের পরিশ্রম, ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে চান৷

ত্বক পরিচর্যার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিন

উষ্ণ জলাশয়ে সাঁতারের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনটি৷ ত্বকের আর্দ্রতা শুকিয়ে যেতে না যেতেই চলে তেল দিয়ে মালিশ৷ দুজন থেরাপিস্ট তিলের তেল গরম করে সারা শরীরে ছড়িয়ে হালকা ম্যাসেজ করেন৷ চলে ঘন্টা দুয়েক৷ তারপর এক ঘন্টা ধরে চলে নাক পরিষ্কার করা, খুব আরামদায়ক না হলেও৷ এসবের মাধ্যমে শরীরের শুদ্ধিকরণ হয়৷ দূর হয় বিষাক্ততা৷ এমনটাই মনে করা হয় আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা শাস্ত্রে৷

Bad Ems an der Lahn Maharishi-Ayurveda-Klinik
লুডোভিক মার্টিন আয়ুর্বেদিক চিকিত্সা নিচ্ছেন নিয়মিতছবি: DW

প্রত্যেক রোগীর শারীরিক গঠন প্রকৃতি অনুযায়ী চিকিত্সা দেয়া হয়৷ মার্টিন শীতকালের অন্ধকার মাসগুলিই বেছে নেন ক্লিনিকে থাকার জন্য৷ কেননা বাইরে নদীর পাড়ে ঘুরে বেড়ানোর তাগিদটা থাকেনা এই আবহাওয়ায়৷ তবে দোকান পাটে মাঝে মাঝে যাওয়ার ইচ্ছাটা দমন করতে পারেননা তিনি৷ মার্টিনের ভাষায়, ‘‘মাঝে মাঝে আমি সসেজের দিকে এক ঝলক দৃষ্টি বুলাতে সুপার মার্কেটেও ঢুঁ মারি, যে সব খাওয়া আমার একেবারেই বারণ৷''

দেখা দেয় অ্যালকোহলের প্রতি অনীহা

ক্লিনিকে অন্যান্যদের সঙ্গে বসে মার্টিন জিরার পানি পান করেন রসিয়ে রসিয়ে৷ এই পানি হজমে সাহায্য করে৷ খাবারের তালিকায় প্রথমেই থাকে ভ্যানিলা সসের সাথে বেরির পুডিং৷ মিষ্টি জাতীয় খাবারের বেলায় তেমন কার্পণ্য করা হয়না ক্লিনিকে, কেননা মিষ্টি হজম শক্তি বাড়ায় এবং মন মেজাজও ভাল রাখে৷ জানান ক্লিনিকের পরিচালক কারিন পির্ক৷ এরপর দেয়া হয় স্যালাদ আর থাকে প্রচুর পরিমাণে সুস্বাদু নিরামিষের খাবার৷ পানীয় হিসাবে থাকে গরম জল৷ অ্যালকোহল ও অন্যান্য কফিনযুক্ত পানীয় এখানে ট্যাবু৷

ক্লিনিকের চিকিত্সা নিয়ে বের হয়ে আসার পর এক গ্লাস রেড ওয়াইনেও আর সেরকম স্বাদ পাওয়া যায়না৷ কেননা পরিশুদ্ধ শরীরে অ্যালকোহল আর সহ্য হয় না৷

এ প্রসঙ্গে কারিন পির্ক বলেন, ‘‘কোনো ভুল হতে থাকলে শরীরের অর্গানিজমের সেটাই অভ্যাস হয়ে যায়৷ শুদ্ধিকরণের পর শরীর অনেক বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, অনেকটা বাচ্চার শরীরের মত৷''

চিকিত্সার ধকল কাটাতে সময় লাগে

ক্লিনিকের রোগীরা চিকিত্সার ধকলে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েন প্রথম দিকে৷ হালকা খেলাধুলা বা হাঁটাচলায় বাধা নেই৷ জোর দেয়া হয় ঘুমের ওপর বিশেষ করে মধ্য রাতের আগে৷ টিভি ও কম্পিউটার নিষেধ৷ সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাত্রার ওপর বক্তৃতা শোনেন ক্লিনিকে অবস্থানকারীরা৷ শেখেন যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশনের কলা কৌশল৷

Dr. Karin Pirc
জার্মানির এক আয়ুর্বেদিক চিকিত্সক কারিন পির্কছবি: Maharishi Ayurveda Privatklinik Bad Ems

এই রকমই এক রোগী হলেন আনে গ্যুনথার৷ বহু ডাক্তার দেখিয়ে অবশেষে এই ক্লিনিকে এসেছেন তিনি সাহায্যের আশায়৷ দীর্ঘমেয়াদী কঠিন এক আন্ত্রিক অসুখে ভুগছেন আনে৷ সেই সাথে যুক্ত হয়েছে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের এক রোগ৷ ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছেন৷ বলা হয়েছে, ‘‘অসুখটা ক্রনিক৷ বাকি জীবনটা আপনার ওষুধের ওপর নির্ভর করেই চলতে হবে৷ এর চেয়ে বেশি কিছু করার নেই৷''

শুধু রোগ নয় গুরুত্ব দেয়া হয় রোগীকেও

আয়ুর্বেদিক চিকিত্সায় শুধু রোগ নয় সমগ্র মানুষটির দিকেই দৃষ্টি দেয়া হয়৷ ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার সময় চিকিত্সকরা রোগীর জীবনযাত্রা, প্রাত্যহিক অভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে প্রশ্ন করেন৷ আর এই দিকটিই বিশেষ করে আকৃষ্ট করেছে আনেকে৷ সাধারণ চিকিত্সার জন্য বিমা কোম্পানিগুলি সারা জীবন ধরে ওষুধের দাম দিতে প্রস্তুত৷ কিন্তু আয়ুর্বেদিক চিকিত্সার খরচ আনের নিজেকেই বহন করতে হচ্ছে৷ সপ্তাহে ১৫০০ ইউরো৷ আনে জানান, ‘‘আয়ুর্বেদীয় চিকিত্সার জন্য আমার সঞ্চয়ের টাকা খরচ করতে হয়েছে৷ তবে এতে আফসোস নেই আমার৷ আগের মত কোনো কিছুতে তাড়াহুড়া করিনা এখন, উত্তেজিত হয়ে উঠিনা অল্পতেই৷''

আনে গ্যুন্থার আগের চেয়ে অনেক সুস্থ বোধ করছেন, তাই তাঁর জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস সবকিছুইতেই পরিবর্তন আনতে চান তিনি৷

ক্লিনিকের ম্যানেজার লোথার পির্ক বলেন, ‘‘আমরা রোগীদের নিজেদের চিকিত্সায় সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করি৷ নিজের পকেট থেকে খরচ হয় বলে তাঁরা এমনিতেই এই চিকিত্সার ব্যাপারে আগ্রহী৷''

তাঁর স্ত্রী কারিন পির্ক বলেন, আমি রোগীদের বন্ধু বলে মনে করি৷ আর বন্ধুদের তিনি পরামর্শ দেন চিকিত্সার পর সপ্তাহ খানেক বাড এমস শহরে ছুটি কাটাতে, মনোরম এই এলাকাটি ঘুরে ঘুরে দেখতে৷ চিকিত্সার পাশাপাশি এটা উপরি পাওনা৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য