শেষ যুদ্ধাপরাধীকেও হেগ’এ পাঠালো সার্বিয়া
২৩ জুলাই ২০১১তিন বছর আগে রাদোভান কারাজিচ, আর মাস দুয়েক আগে রাটকো ম্লাদিচ৷ এই দুজনকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দ্য হেগ'এর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত আইসিসি'তে পাঠিয়েছে সার্বিয়া৷ এবার তারা পাঠালো গোরান হাজিচকে৷
কারজিচ আর ম্লাদিচের মতো অতটা জনপ্রিয় নন হাজিচ৷ তাই তাঁর গ্রেপ্তার সার্বিয়ার মানুষের মনে তেমন আলোচনার জন্ম দেয়নি৷
তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে হাজিচের গ্রেপ্তারের ঘটনা এবং তাঁকে বিচারের জন্য দ্য হেগ'এ পাঠানো সার্বিয়ার জন্য বড় এক ঘটনা৷ কেননা এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে সার্বিয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে গেল৷ এতদিন ইইউ'র অনেক দেশ সার্বিয়াকে ইইউ'র সদস্যপদ দেয়ার বিরোধিতা করে আসছিল৷ এর কারণ হিসেবে তারা বলছিল যে, সার্বিয়া যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না৷
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে যুদ্ধের পর য়ুগোশ্লাভিয়া ভেঙে কয়েকটি দেশে পরিণত হয়৷ সেই যুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ সহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১৬১ জনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আনে আইসিসি৷ হাজিচ ছিলেন তাঁদের মধ্যে সবশেষ ব্যক্তি যাকে সার্বিয়া গ্রেপ্তার করে আইসিসিতে পাঠালো৷
হাজিচের বিরুদ্ধে মোট ১৪টি অভিযোগ রয়েছে৷ এর মধ্যে একটি হলো আড়াইশো'র বেশি লোককে হত্যা৷ জানা যায়, এরা সবাই একটি হাসপাতালে ছিল৷ হাজিচের নেতৃত্বাধীন বাহিনী তাদের ধরে এনে গুলি করে হত্যা করে৷
যুদ্ধের পর থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছেন হাজিচ৷ এরপর আইসিসি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান৷ কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি৷ ইটালির এক শিল্পীর চুরি করা এক শিল্পকর্ম বিক্রি করতে গিয়ে গত বুধবার হাজিচ ধরা পড়েন৷
গতকাল শুক্রবার তাঁকে হেগ'এ পাঠিয়ে দেয়া হয়৷ এর আগে হাজিচের ইচ্ছা অনুযায়ী তাঁকে তাঁর অসুস্থ মা'র সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়৷ এছাড়া হাজিচের সঙ্গে দেখা করেছে তাঁর স্ত্রী ও ছেলে৷ আর তিনি যখন আত্মগোপনে ছিলেন তখন অন্য এক মহিলার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়৷ এবং এর পরিণতিতে একটি কন্যা সন্তানেরও জন্ম হয়৷ ঐ মহিলাও তার মেয়েকে নিয়ে হাজিচের সঙ্গে দেখা করেছে৷
কিন্তু এখন প্রশ্ন হচ্ছে, হাজিচকে হেগ'এ পাঠিয়ে কী সার্বিয়ার ইইউ সদস্যপদ নিশ্চিত হলো? অনেকে মনে করতে পারেন তা৷ কেননা ইউরোপীয় ইউনিয়ন সার্বিয়ার এই পদক্ষেপকে খুব ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে৷ এক বিবৃতিতে ইউরোপীয় কমিশন সার্বিয়ার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে৷
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সদস্যপদ পাওয়াটা নিশ্চিত নয় বরং কিছুটা সুগম হয়েছে৷ কেননা যুদ্ধাপরাধীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখযোগ্য শর্ত হলেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যেটা সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হতে পারে৷ এর মধ্যে রয়েছে দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনা৷ এছাড়া কসোভোর স্বাধীনতাকে সার্বিয়া এখনো মেনে নেয়নি৷
এসব কারণে ২০২০ সালের আগে সার্বিয়া ইইউতে প্রবেশ করতে পারবে বলে মনে করছেন না অনেকে৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক