1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যবাংলাদেশ

‘শুরুতে সতর্ক থাকলে ডেঙ্গুর অঘটন এড়ানো সম্ভব’

সমীর কুমার দে ঢাকা
১২ মে ২০২৩

শুরু হচ্ছে ডেঙ্গু মৌসুম৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ কিন্তু একজন কীভাবে বুঝবেন যে তার ডেঙ্গু হয়েছে? ডেঙ্গু হলেই কি হাসপাতালে যেতে হবে? কীভাবেই বা নিরাপদে থাকা সম্ভব?

https://p.dw.com/p/4RFe1
Bangladesch | Denguefieber
ফাইল ফটো৷ছবি: Mortuza Rashed/DW

এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ‌বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ৷

ডয়চে ভেলে : ডেঙ্গু হলে কিভাবে বুঝবেন?

ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ : ডেঙ্গু সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষ মোটামুটি জানে৷ এটা ভাইরাস জ্বর৷ হাই টেমপারেচারে জ্বর হয়৷ ১০৩, ১০৪, ১০৫ ডিগ্রি উঠে যায়৷ এর সঙ্গে সারা শরীর ব্যাথা করবে৷ মাংসতে ব্যাথা, কব্জিতে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, চোখের পিছনে ব্যাথা করবে৷ এত ব্যাথা যে, এটার আগে নাম ছিল হাড় ভাঙা জ্বর৷ এটা তো রোগী বুঝতেই পারবে৷ এর সঙ্গে মুখে রুচি নেই, বমি হবে৷ সাধারণত জ্বরের ৪-৫ দিন পর শরীরে লাল লাল র‌্যাশ উঠে এলার্জির মতো৷ নাও উঠতে পারে৷ কারও কারও ক্ষেত্রে রক্তের প্লাটিলেট কমে যায়৷ তখন শরীরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে৷ সাধারণত রোগীরা বলেন, দাঁত ব্রাশ করতে গেলে রক্ত, মল ত্যাগের সময় রক্ত, নাক-মুখ দিয়ে রক্ত, বমির সঙ্গে রক্ত, এমনকি মেয়েদের অসময়ে ঋতুস্রাব হয়ে যাচ্ছে, আবার সেটা বন্ধ হচ্ছে না, এমন যদি থাকে তখন আমরা ধরে নেই এটা ডেঙ্গুই হয়েছে৷ তবে সবার সব লক্ষণ নাও থাকতে পারে৷ অনেক সময় দেখা যায়, কারও র‌্যাশ উঠে, কারও ওঠে না৷ আবার অনেকে এক-দুই দিন পরই র‌্যাশ উঠছে৷ আবার কারও রক্তক্ষরণ আগেই শুরু হচ্ছে৷ টিপিক্যাল লক্ষণ অনেকের থাকে, অনেকের থাকে না৷ অনেক সময় জ্বরের ৪-৫ দিন পর রোগীর পেটে, বুকে পানি আসে৷ পেট ফুলে যায়৷ সুতারাং বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ হতে পারে৷

ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর প্রাথমিকভাবে তার করণীয় কি?

প্রথম কথা হল, অন্য কোন ব্যাথার ওষুধ খাবে না, শুধু প্যারাসিটামল ছাড়া৷ বাজারে কত রকমের ব্যাথার ওষুধ আছে সেগুলো খাওয়া যাবে না৷ রোগীকে লিকুইড বাড়িয়ে নিতে হবে৷ যেমন পানি, শরবত, গ্লুকোজ, ডাব, ওরস্যালাইন যা মনে চায় খেতে পারে৷ কারণ রোগীর পানি শূন্যতা হতে পারে৷ বডি থেকে পানি বের হয়ে যায়৷ এজন্য লিকুইড প্রচুর খেতে হবে৷ যেকোন ফল বা খাওয়া দাওয়াতে নিষেধ নেই৷  

ডেঙ্গু হলেই কি ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, নাকি বাসায় থেকেও চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব?

খুব সিরিয়াস না হলে ঘরে বসেই চিকিৎসা নেওয়া যায়৷ ৮০ ভাগ রোগীর ক্ষেত্রেই ঘরে চিকিৎসা সম্ভব৷ ডাক্তারের কাছে সব সময় যেতে হয় না৷ তবে সন্দেহ হলে ডেঙ্গুর এন্টিজেন টেস্ট করে নিলে ভালো হয়৷ টেস্টে পজেটিভ এলে ঘরেই পর্যবেক্ষনে থাকবে৷ তবে যদি রক্তক্ষরণ হয় বা ছোট বাচ্চা, বয়স্ক মানুষ, গর্ভবতী নারী হন, ডায়াবেটিস, হাই ব্লাডপেশার, কিডনী রোগী বা ক্যান্সারের রোগী হয় তাহলে ঘরে রাখা নিরাপদ না৷ তাহলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা উচিৎ৷ কারণ এদের ক্ষেত্রে যে কোন জটিলতা তো হতেই পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিছু হয় না৷ তবে হতেও তো পারে৷

ডেঙ্গু যাতে না হয় তার জন্য কী করণীয় ?

আমরা সবাই জানি, এর শত্রু একটাই৷ সেটা হল এডিস মশার কামড়ে হয়৷ নিজেকে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে৷ দিনে কেউ ঘুমালে মশারি টাঙ্গাবে৷ ঘর-বাড়ির সব জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে৷ মূল কথা হল, মশাকে নির্মূল করতে হবে৷ সুতারাং মশা থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে৷ যেমন আমরা বলি, ফুল শার্ট পড়বে, হাফ প্যান্ট না পরে ফুল প্যান্ট পড়বে৷ স্কুলে বাচ্চারা হাফ প্যান্ট পরে গেলে পায়ে মশায় কামড়াতে পারে৷ ফলে ফুল প্যান্ট পরে যাবে৷ আর প্রশাসনকে খেয়াল রাখতে হবে, যেন ঘরের বাইরে কোথাও জমা পানি না থাকে৷ যদিও আজকাল বলে অপরিষ্কার পানিতেও হয়৷ কিন্তু সাধারণত ডেঙ্গু মশাটা পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে৷ যে কোন জায়গায় জমা পানি থাকলে৷ আর নিজের ঘরের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে৷ এখন অনেকে ছাদ বাগান করে৷ সেখানে দেখতে হবে, ৪-৫ দিন যেন কোন পানি জমে থাকতে না পারে৷ মশার বংশ বিস্তার কমাতে হবে আর নিজেকে মশার কামড় থেকে বাঁচাতে হবে৷ আমাদের বুঝতে হবে, এর কোন টিকা নেই, ভ্যাকসিন নেই৷

অন্যান্য মশার চেয়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ: অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ

কয়েক বছর ধরে দেখছি, ডেঙ্গুর সময় এক ধরনের চিকিৎসা সংকট তৈরি হয়৷ সেই সংকট মোকাবেলায় আগে থেকে কেন প্রস্তুতি নেওয়া হয় না?

মূল কথা হল, বছরব্যাপী মশা নির্মূলের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে৷ সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আজকাল তো শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে৷ এই মশাগুলো তো সুন্দর বাড়িতে এবং পরিষ্কার পানিতে ডিম পাড়ে৷ প্রশাসনের দায়িত্ব ঘরের বাইরে, আর ঘরের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে৷ যখনই ডেঙ্গু আসে তখন তোড়জোড় শুরু হয়, অথচ সারা বছর খবর নেই৷ এটা না করে সারা বছর ধরে মশা নির্মূলের কাজ করে যেতে হবে৷ শুধু প্রশাসনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ কোন প্রশাসন এসেও আমার ঘর পরিস্কার করে দিয়ে যেতে পারবে না৷ এত জনবলও নেই, দরকারও নেই, মানুষও অনুমতি দেবে না৷ এজন্য সবাই মিলে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ একতরফা কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই৷ এটা না হলে ডেঙ্গু নির্মূল করা একটু কঠিনই হবে৷ হাসপাতালে গেলে ডাক্তারদের চিকিৎসা দিতে কিন্তু কোন অসুবিধা নেই৷ আমাদের দেশের ডাক্তাররা খুবই এক্সপার্ট হয়ে গেছে৷ তারা তো প্রস্তুতই আছেন৷ আমাদের কথা হল, রোগী যেন কম হয়, রোগ যেন কম হয়৷

সিটি কর্পোরেশনও তো চাইলে আগে থেকেই মশা মারার কর্মসূচি শুরু করতে পারে৷ তারা কেন সেটা করে না?

এটা তো শুধু ঢাকা শহরের ব্যাপার না৷ এটা পুরো বাংলাদেশের ব্যাপার৷ আর সিটি কর্পোরেশনেরও তো একার ব্যাপার না৷ উপজেলা পর্যায়েও তো ডেঙ্গু হচ্ছে৷ এই মশা তো ট্রেন, বাস বা বিমানে করেও চলে যাচ্ছে৷ এমনকি ঢাকা শহরের সব জায়গা কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের আওতায় না৷ যেমন বিমানবন্দর৷ এটা তো আলাদা অথরিটির আওতায়৷ সবার সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ সবাই মিলেই কাজটা করতে হবে৷

নিজেরা সুরক্ষিত থাকার চেষ্টা করেও ডেঙ্গু থেকে কতটা নিরাপদে থাকা সম্ভব?

এটা তো বলা মুশকিল৷ কারণ ডেঙ্গুটা তো হচ্ছে মশার কামড়ে৷ আপনি তো হাটে, ঘাটে, মাঠে যাচ্ছেন৷ কোথায় হুট করে একটা ডেঙ্গু বাহিত মশা কামড় দেবে সেটা হয়ত আপনি বুঝতেও পারবেন না৷ এটার গ্যারান্টি দেওয়া মুশকিল৷ তবে সতর্কতা তো নিতেই হবে৷ এর তো কোন বিকল্প নেই৷ একেবারে নির্মূল না হলেও নিয়ন্ত্রণ তো সম্ভব৷

সরকারের পক্ষে আগে থেকে কি ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?

এখানে আসলে সরকারের খুব একটা কিছু করণীয় নেই৷ সরকার নির্দেশনা দেবে৷ মূল কাজ যারা মশক নিধনের কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত তাদের৷ শত্রু তো আমরা চিনি৷ মশার উৎপাদন যেখানে হয় সেটা পরিষ্কার রাখা দরকার৷ সবাইকে নিজের কাজটা করতে হবে৷ নিজে কাজ না করে অন্যকে দোষ দিয়ে তো লাভ নেই৷

ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?

একটাই কথা, যেন জমা পানি না থাকে৷ মশা যেন তার বংশ বিস্তার করার সুযোগ না পাই৷ মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য যা যা করা দরকার সেটা করতে হবে৷ যদি কেউ আক্রান্ত হয়ে যান তাহলে অবহেলা করা যাবে না৷ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷ এখন তো টেলিফোন, অনলাইনসহ নানাভাবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া যায়৷ তাহলে অধিকাংশ রোগী ঘরে বসেই চিকিৎসা নিতে পারেন৷ আর ডাক্তার যদি বলেন, হাসপাতালে যেতে হবে, তাহলে যাবেন৷ অনেক সময় দেখি দেখি করে রোগী ঘরে বসে থাকেন৷ হঠাৎ করেই সিরিয়াস হয়ে গেল৷ তখন অনেকে শকে চলে যান৷ এটাকে বলা হয়, ডেঙ্গু শক৷ এটা বিপজ্জনক৷ এমন হয়ে গেলে কিন্তু বাঁচানো মুশকিল৷ শুরু থেকে সতর্ক থাকলে অঘটন এড়ানো সম্ভব৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান