কলকাতা উত্তরে সুদীপ-তাপস-প্রদীপের জমজমাট লড়াই
লোকসভা নির্বাচনে কলকাতা উত্তর কেন্দ্রে জমজমাট লড়াই হচ্ছে। এই কেন্দ্রের তিন প্রধান প্রার্থীই কংগ্রেসে ছিলেন।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেন্দ্র
কলকাতা উত্তর হলো সুদীপ বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কেন্দ্র। সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের লোকসভার নেতা ছিলেন। সারদায় অভিযুক্ত হয়ে জেল খেটেছেন। মোট পাঁচবারের সাংসদ সুদীপ কলকাতা উত্তর থেকে জিতেছেন পরপর তিনবার। গতবার তিনি প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। ফলে সুদীপ এখানে খুবই শক্তিশালী প্রার্থী।
গলিতে গলিতে সুদীপ
কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে। এই কেন্দ্রে পুরনো কলকাতার সরু গলি থেকে বড়বাজারের ব্যবসায়িক এলকা, গঙ্গার ধারের এলাকা সবই আছে। কাশীপুর, শ্যামপুকুর, জোড়াসাকো, বৌবাজার, জোড়াবাগান, তালতলার মতো বিধানসভা কেন্দ্র এর মধ্যে পড়ছে। ৭৫ বছর বয়সি সুদীপ বন্দ্য়োপাধ্যায় সকাল থেকেই কেন্দ্রে ঘুরছেন। ভোটদাতাদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন।
সুদীপকে ঘিরে বিতর্ক
এবার সুদীপের প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের ভিতরই প্রবল বিতর্ক হয়েছিল। কুণাল ঘোষ সুদীপের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে সোচ্চার হয়েছিলেন। পরে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশে কুণাল মিটমাট করে নেন সুদীপের সঙ্গে। সুদীপ নিজেও উত্তর কলকাতার বাসিন্দা। এখন তিনি প্রচারে বের হলে কেউ তার কপালে টিকা পরিয়ে দিচ্ছেন। কেউ হাত লাড়ছেন। কেউ ফুলও ফেলছেন। তবে কিছুদিন আগেও তৃণমূলের এক কাউন্সিলার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সুদীপের বিরুদ্ধে।
সকলের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা
কলকাতায় এখন প্রচণ্ড গরম। তার মধ্যে সকালে-বিকালে প্রচার করছেন সুদীপ। পরনে ট্রেডমার্ক সাদা পাজামা ও লম্বা পাঞ্জাবি। গলায় উত্তরীয়। এই ঝানু রাজনীতিক এলাকায় সমানে ঘুরে যাচ্ছেন।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-র প্রার্থী তাপস
বিজেপি এবার কলকাতা উত্তরে প্রার্থী করেছে তৃণমূল ছেড়ে তাদের দলে যোগ দেয়া নেতা তাপস রায়কে। তাপসেরও রাজনীতি শুরু কংগ্রেস থেকে। পরে তিনি তৃণমূলে যান। চারবারের বিধায়ক। রাজ্যে মন্ত্রীও ছিলেন। ভোটের আগে দলবদল করেন। তৃণমূলে যতদিন ছিলেন, ততদিন সুদীপ-বিরোধী বলে পরিচিত ছিলেন। এহেন তাপস এবার সুদীপকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্যে ফেলেছেন।
অন্য ধরনের প্রচার
প্রচারে নেমে ৬৭ বছর বয়সী তাপস কখনো যাচ্ছেন সিপিএম নেতা বিমান বসুর কাছে, কখনো চলে যাচ্ছেন তার রাজনৈতিক গুরু প্রয়াত অজিত পাঁজার বাড়িতে তার মেয়ে ও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে। বিমান বসুর কাছে আশীর্বাদ ও ভোট দুটোই চেয়েছেন তাপস। বিমান বলেছেন, ''আশীর্বাদ করছি। কিন্তু ওখানে জোটের প্রার্থী আছে। আমরা লড়ছি।'' শশী পাঁজার কাছেও ভোট দেয়ার আবেদন তাপসের।
প্রচারে ক্লান্তি নেই তাপসের
সকাল থেকে প্রচার শুরু করে দিচ্ছেন তাপস। দুপুরের ভয়ংকর গরমেও তিনি প্রচার করছেন। যাচ্ছেন বিভিন্ন জায়গায়। হেঁটে মানুষের দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন। কখনো গাড়িতে করে প্রচার করছেন। কলকাতা উত্তরের ছেলে তিনি। এখানেই তিনি রাজনীতি করেছেন। ফলে এই এলাকাকে হাতের তালুর মতো চেনেন।
'মানুষ আমায় কাছে পাবেন'
তাপস বলছেন, তাকে জেতালে মানুষ সাংসদকে কাছে পাবেন। তার দরজা সবসময়ই মানুষের জন্য খোলা। সাংসদ হলে, তার কাছে যেতে, কারো কোনো অসুবিধা হবে না। বিপদে আপদে তিনি পাশে থাকেন, থাকবেনও। তাপসের দাবি, এতদিন এলাকার মানুষ সাংসদের কাছ থেকে এটা পাননি। তাপস জানেন, কঠিন লড়াই। কিন্তু সেই লড়াইয়ে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ তিনি।
সাবেক কংগ্রেস সভাপতিও লড়াইয়ে
কলকাতা উত্তরে কংগ্রেসের প্রার্থী প্রদীপ ভট্টাচার্য। সাবেক প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। এর আগে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জিতেছেন। রাজ্যসভাতেও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ছিলেন। প্রধান তিন দলের প্রার্থীর মধ্যে বয়সে তিনিই সবচেয়ে বড়। ৭৯ বছর বয়সে কলকাতা উত্তরে ভাগ্যপরীক্ষায় নেমেছেন প্রদীপ ভট্টাচার্য।
প্রচারে খামতি নেই
প্রদীপ ভট্টাচার্যও ভরপুর প্রচার করছেন। মানুষের কাছে পৌঁছাবার চেষ্টা করছেন। গাড়িতে করে কলকাতা উত্তর চষে ফেলছেন তিনি।
সঙ্গে বাম
এবার কংগ্রেস ও বামেদের জোট হয়েছে। কলকাতা উত্তর বামেরা ছেড়ে দিয়েছে কংগ্রেসকে। প্রদীপ ভট্টাচার্যের প্রচারে তাই দেখা যাচ্ছে লাল বেলুন।
কঠিন লড়াই
প্রদীপ জানেন, কলকাতা উত্তরের লড়াই তার জন্য খুবই কঠিন। সুদীপ ও তাপস দুজনেই শক্তিশালী প্রার্থী। তাও তিনি টক্কর দেয়ার চেষ্টা করছেন।
কে কাকে সাহায্য করছেন?
সম্প্রতি কুণাল ঘোষ বলেছেন, কলকাতা উত্তরের বিজেপি সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ ভোটের লড়াইয়ে তৃণমূলকে সাহায্য করছেন। দলের কর্মীরাই তাকে এই খবর দিয়েছেন। তমোঘ্ন পাল্টা বলেছেন, কুণালই আসলে সুদীপের বিরুদ্ধে বিজেপি-কে সাহায্য করছেন। কুণাল জেলে যাওয়ার আগে ও পরে বিজেপি-তে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। দিল্লিতে বিজেপি নেতার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই ফুটেজও তাদের কাছে আছে।